আমাদের সমাজে জামাতে নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করার বিষয়ে দু’ধরণের প্রান্তিকতা রয়েছে। কেউ একে নামাযের অংশ মনে করেন। আর কেউ একে নাজায়িয ও বেদআত বলেন। অথচ উভয় ধারণাই ভুল। প্রকৃত সত্য হল, এটা কেবল মুস্তাহাব আমল, তবে তা নামাযের অংশ নয়। সুতরাং বাড়াবাড়ি একেবারে অনুচিত।
এ বিষয়ে কিছু হাদিস:
১. হযরত সালমান ফারসী রাযি. হতে বর্ণিত,
إنَّ اللَّهَ حيِىٌّ كريمٌ يستحي إذا رفعَ الرَّجلُ إليْهِ يديْهِ أن يردَّهما صفرًا خائبتينِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তাআলা দয়ালু, দাতা। যখন বান্দা তাঁর সামনে প্রার্থনার হাত প্রসারিত করে তখন তা শূন্য ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জ্বাবোধ করেন। (জামি’ তিরমিযী ৩৫৫৬)
২. আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবি ইয়াহইয়া রহ. বলেন,
رایت عبد اللہ بن الزبیر و رئیٰ رجلا رافعا یدیہ قبل ان یفرغ من صلاتہ، فلما فرغ منھا قال: ان رسول اللہ ﷺ لم یکن یرفع یدیہ حتی یفرغ من صلاتہ۔
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাযি. একজন নামাযীকে দেখলেন, সে নামায শেষ করার আগেই হাত তুলে মুনাজাত করছে। তিনি তাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায সমাপ্ত হওয়ার আগে হাত তুলে মুনাজাত করতেন না। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৬৯)
৩. হযরত সালমান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ما رفع قوم اکفھم الی اللہ عز و جل یسئلونہ شیئا الا کان حقا علی اللہ ان یضع فی ایدیھم الذی سئلوا۔
যখন কিছু মানুষ হাত উঠিয়ে আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে তখন অবশ্যই আল্লাহ তাদের প্রার্থিত বিষয় দান করেন। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৬৯)
৪. হযরত আবূ উমামাহ রাযি. হতে বর্ণিত,
قِيلَ يا رسولَ اللهِ ﷺ : أيُّ الدعاءِ أسمَعُ قال جَوفَ الليلِ الآخِرِ ودُبُرَ الصلواتِ المكتوباتِ
সাহাবীগণ রাযিয়াল্লাহু তা`আলা আনহুম রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন মুনাজাত বেশি কবূল হয়? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, শেষ রাতের মুনাজাত ও ফরয নামাযের শেষের মুনাজাত। (জামি’ তিরমিযী ৩৪৯৯)
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই,
প্রথম হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে, হাত তুলে মুনাজাত করলে তা কবূলের সম্ভাবনা বেশি।
দ্বিতীয় হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺনামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করতেন।
তৃতীয় হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কিছু মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন তখন তা কবূল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থ হাদীস থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, নামায শেষে মুনাজাত কবূল হয়।
ইমাম নববী (রহ.) মুহাজজাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ 'আল মাজমু' গ্রন্থে দোয়ার মধ্যে হাত উঠানো এবং হাতের তালু মুখে ফেরানোর ব্যাপারে ৩০টি হাদিস উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি এর বিধান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব। (আল মাজমু ৪৪৮-৪৫০)।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) ফতহুল বারি ১১/১১৮ এবং বুলুগুল মুরামে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করে ফরয নামাজের পর দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব প্রমাণ করেছেন।
(ফাতহুল বারীঃ১১/১১৮)
আব্দুর রহমান মোবারকপুরী তুহফাতুল আহওয়াজিতে লেখেন, নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা জায়েজ। (তুহফাতুল আহওয়াজি ২/২০২, ১/২৪৪)।
লা-মাজহাবিদের আলেম হাফেজ আব্দুল্লাহ রওপুরী তাঁর একটি ফতোয়ায় লিখেছেন, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব আমল। (ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদিস ১/২২-১৯৮৭ ইং)
সুতরাং প্রতীয়মান হল, নামাযের পর সকলে মিলে মুনাজাত করা যাবে। তবে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি মোটেও কাম্য নয়।
জাযাকাল্লাহ খায়ের।