জী। বালাগাতের فصل এর নিয়ম অনুযায়ী কালিমার মধ্যে و দ্বারা عطف করা হয়নি।
§ অর্থগতভাবে দুইটি বাক্যের মাঝে কোনো মিল না থাকলে উভয়ের মাঝে واو ব্যবহার করা হয় না। যেমন: عليٌّ كاتب الحمام طائر অর্থাৎ, আলি একজন লেখক, পাখি উড়ে। এখানে আলির লেখক হওয়ার সাথে পাখির উড়ার অর্থগত কোনো সম্পর্ক নেই। তাই উভয় বাক্যের মাঝে واو ব্যবহার করা হয়নি। অনুরূপ উদাহরণ: لا إله إلا الله محمد رسول الله
এ কালিমায় দুটি বাক্য আলাদা আলাদা। দুটির মধ্যে অর্থগত কোনো মিল নেই, তাই মাঝখানে واو আনা হয়নি। এ কালিমায় তথ্যগত ও ব্যাকরণগত কোনো ভুল নেই। এর কিছু প্রমাণ আমরা নিম্নে উল্লেখ করবো। বর্তমানে কিছু মানুষ তাদের জ্ঞানের কমতির কারণে এই সহীহ-শুদ্ধ কালিমার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে গোমরাহীর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক।
لا إله إلا الله محمد رسول الله কালিমার দলিল:
v হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. সাহাবাদের জীবনচরিত বিষয়ক তার লিখিত কিতাব “আল ইসাবাহ” তে “যিয়াদাতুল মাগাযী” থেকে একটি হাদিস সনদসহ উল্লেখ করেছেন। তার পুরো ইবারত হলো-
ذكره يونس بن بكير في زيادات المغازي وأخرجه الحاكم من طريق يونس عن يوسف بن صهيب عن عبد الله بن بريدة عن أبيه قال انطلق أبو ذر ونعيم بن عم أبي ذر وأنا معهم يطلب رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو مستتر بالجبل فقال به أبو ذر يا محمد أتيناك لنسمع ما تقول قال أقول لا اله الا الله محمد رسول الله فآمن به أبو ذر وصاحبه
অর্থাৎ, ইউনুস ইউসুফ বিন সুহাইবের সূত্রে, তিনি আবদুল্লাহ বিন বুরায়দা থেকে, তিনি তার পিতা বুরায়দা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু যার এবং নুয়াইম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসন্ধানে বের হলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন পাহাড়ের আড়ালে ছিলেন। আবু যর বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমরা এসেছি আপনার বক্তব্য শুনার জন্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি বলি ‘লা ইলাহা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। (আল্লাহ তায়ালালা ব্যতীত ইবাদতের উপযুক্ত কোনো উপাস্য নেই। মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল) তখন আবু যার এবং তার সাথী ইসলাম গ্রহণ করলেন”। (আল ইসাবাহ, ৬/৪৬৩. শায়খ আলী মুহাম্মাদ তাহকীককৃত, দারুল যিল, বায়রুত থেকে প্রকাশিত)
উক্ত হাদীসের রাবী ইউনুস, ইউসুফ বিন সুহাইব এবং আবদুল্লাহ বিন বুরায়দা দুজনই সিকাহ রাবী। যাদের ব্যপারে আলোচনা রয়েছে- ‘কিতাবুছ ছিকাত’ ও ‘তাকরীবুত তাহযীব’ কিতাবে।
v ইমাম তাবারানী রহ. এর লিখিত “আল মুযামুল আওসাত” কিতাবে একটি হাদীস রয়েছে-
حدثنا أحمد بن رشدين قال حدثنا عبد الغفار بن داود أبو صالح الحراني قال حدثنا حيان بن عبيد الله قال حدثنا أبو مجلز لاحق بن حميد عن بن عباس قال كانت راية رسول الله سوداء ولواؤه أبيض مكتوب عليه لا إله إلا الله محمد رسول الله لا يروى هذا الحديث عن بن عباس إلا بهذا الإسناد تفرد به حيان بن عبيد الله
অর্থাৎ, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সা. এর পতাকা ছিল কালো রঙের। পতাকার টানা ছিল সাদা রঙের। তাতে লেখা লেখা ছিল لا إله إلا الله محمد رسول الله
(আল মুযামুল আওসাত, হাদীস নং ২১৯, দারুল হারামাইন, কায়রো, শায়খ তারেক তাহকীককৃত।)
উপরে উল্লেখিত হাদীসটি সম্পর্কে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম হাইছামী রহ. বলেন,
قلت : رواه الترمذي وابن ماجة خلا الكتابة عليه
رواه الطبراني في الأوسط وفيه حيان وتقدم الكلام عليه تراه قبل وبقية رجاله رجال الصحيح
অর্থাৎ, হাদীসটি ইমাম তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ শেষাংশ ছাড়াই বর্ণনা করেছেন। আর পুরো হাদীসটি ইমাম তাবারানী রহ. ‘আল মুযামুল আওসাত’এ বর্ণনা করেছেন। হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হলেন হাইয়্যান । তার ব্যাপারে আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে। এছাড়া বাকী সকল বর্ণনাকারী সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী। (মাযমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং ৯৬৩৯, দারুল ফিকর, বায়রুত)
ইমাম হাইছামী রহ. একজন (হাইয়্যান) ব্যতিত বাকী সকল বর্ণনাকারীকে সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী বলেছেন। আর জরাহ, তাদীলের তিনজন ইমাম (ইমাম ইবনে হিব্বান, ইমাম আবু হাতিম এবং ইসহাক বিন রাহুয়াহ) তিনজনই (হাইয়্যানকে) সত্যবাদী তথা সিকাহ বলেছেন।
সুতরাং, উসূলে হাদীসের স্বীকৃত মূলনীতি যার ব্যাপারে ইমাম সাখাবী রহ. বলেন-
وكذا إذا تلقت الأمه الضعيف بالقبول يعمل به على الصحيح حتى أنه ينزل منزله المتواتر في أنه ينسخ المقطوع به
অর্থাৎ, অনুরুপ উম্মত যখন কোনো যয়ীফ হাদীসকে কবুল করে নেয়, তখন সহীহ কথা হলো, সেই যয়ীফ হাদীস অনুযায়ী আমল করা যায়। এমনকি হাদীসটি মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছে যায়। এবং তা দ্বারা বিষয়ও রহিত হয়ে যায়। (ফাতহুল মুগীছ ১/২৮৯, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, লেবানন, প্রথম সংস্করণ।)
হাফেজ জালালুদ্দীন সুয়ূতি রহ. বলেন- يحكم للحديث بالصحة إذا تلقاه الناس بالقبول وإن لم يكن له إسناد صحيح
অর্থাৎ, হাদীসকে সহীহ বলা হবে যখন ঐ হাদীসকে উম্মত কবুল করে নিবে। যদিও সে হাদীসের সহীহ কোন সনদ না থাকে। (তাদরীবুর রাবী, ১/৪২)
অতএব, পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ যেহেতু এই কালিমা কম-বেশি পড়েছে এবং এটাকে কালিমা হিসেবে মেনে নিয়েছে, তাই মুহাদ্দীসদের নিয়ম অনুযায়ী ইবনে আব্বাস রা. এর হাদীসটিও মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কোনোভাবেই এই কালিমাকে ভুল কিংবা নিয়মের বহির্ভুত বলা ঠিক হবে না বরং তা গোমরাহীর অন্তর্ভুক্ত।
والله أعلم بالصواب