পিতার উপর সন্তানের হক্ব
আকিকা করা এবং নাম রাখা:
সূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘প্রতিটি শিশু তার আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করবে, মাথার চুল মুন্ডন করবে এবং নাম রাখবে’। আবূদাঊদ হা/২৮৩৮,
খাতনা করানো:
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, ‘স্বভাব সম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে খাৎনা করা একটি’। তিরমিযী হা/২৭৫৬,
সন্তানের ব্যয়ভার বহন করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের (সন্তান ও জননীর) ভরণ-পোষণের ভার পিতার উপরই ন্যস্ত’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।
পিতার নিকট হ’তে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপকরণ সন্তানের প্রাপ্য অধিকার। সন্তানের এ সমস্ত প্রয়োজন পূরণে পিতা অমনোযোগী হ’লে অবশ্যই তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই আপন আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। বুখারী হা/৫২০০; মিশকাত হা/৩৬৮৫।
সন্তানের জন্য দ্বীনদার মায়ের ব্যবস্থা করা:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিবাহের ক্ষেত্রে বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য ও আল্লাহভীরুতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِيْنِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.
‘মহিলাদেরকে চারটি গুণের অধিকারিণী দেখে বিবাহ করা হয়। (ক) তার ধন-সম্পদ (খ) বংশমর্যাদা (গ) তার সৌন্দর্য ও (ঘ) তার ধর্মপরায়ণতা। তোমরা দ্বীনদার মহিলাকে বিয়ে করে ধন্য হও, অন্যথা তোমার উভয় হাত ধুলায় ধূসরিত হবে’। (অর্থাৎ তুমি লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। বুখারী হা/৫০৯০;
মাতার উপর সন্তানের হক
গর্ভধারণ করা:
আল্লাহ বলেন, حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ.
‘তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন’ (লোকমান ৩১/১৪)।
গর্ভের সন্তানের গর্ভকালীন পুষ্টি মান রক্ষা করা:
এ কারণে মহান আল্লাহ মারয়াম (আঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,
وَهُزِّيْ إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَباً جَنِيًّا- فَكُلِيْ وَاشْرَبِيْ وَقَرِّيْ عَيْناً.
‘তোমার দিকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডকে ঝুঁকিয়ে নাও, সে তোমার উপর পতিত করবে তাজা উপাদেয় খেজুর, তা তুমি খাও ও পান কর এবং নয়ন জুড়াও’ (মারয়াম ১৯/২৫-২৬)।
সন্তানের ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা:
শরিয়ত এজন্য রোজা রাখতেও নিষেধ করেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ شَطْرَ الصَّلَواةِ وَالصَّوْمَ عَنِ الْمُسَافِرِ وَعَنِ الْمُرْضِعِ وَالْحُبْلَى.
‘আল্লাহ তা‘আলা মুসাফির হ’তে অর্ধেক ছালাত এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিনী মাতা ও গর্ভবতী স্ত্রী লোক হ’তে ছিয়াম উঠিয়ে নিয়েছেন’। অর্থাৎ ছিয়ামের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। মিশকাত: ২০২৫,
সন্তানের মানসিক গঠনের প্রতি খেয়াল রাখা:
ক্ষতিকর কোন কিছু গ্রহণ না করা, কুরআন মাজীদে এরশাদ হয়েছে, وَكُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلاَلاً طَيِّباً.
‘আল্লাহ তোমাদের যা কিছু রিযিক দান করেছেন, তার মধ্যে হালাল ও পবিত্র বস্ত্ত আহার কর’ (মায়েদাহ ৫৪/৮৮)।
এখানে রিযিক বলতে যা গ্রহন করে বা পায়। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, আচরণ, ইত্যাদি।
সন্তান কে দুধ পান করানো:
সন্তানকে দুধপান করানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন, وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلاَدَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ.
‘যে সকল জননী সন্তানদের পুরো সময় পর্যন্ত দুগ্ধ দান করতে ইচ্ছা রাখে, তারা নিজেদের শিশুদেরকে পুরো দু’বছর ধরে দুগ্ধ পান করাবে’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)।
মমতাময়ী আচরণ করা:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একবার হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে স্বস্নেহে চুম্বন করেন। আকরা বিন হাবিস আত-তামিমী (রাঃ) এ দৃশ্য দেখে বললেন,
إِنَّ لِىْ مِنَ الْوَلَدِ عَشَرَةً مَا قَبَّلْتُ أَحَدًا مِّنْهُمْ.
‘আমার দশটি সন্তান আছে, আমি তাদের কাউকেই কোন দিন চুম্বন করিনি।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, إِنَّهُ مَنْ لاَ يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ
‘যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না’। তিরমিযী হা/১৯১১; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯১,